আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): প্রায় অভিন্ন দাবিতে ৩ দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ৪টি রাজনৈতিক দল। কর্মসূচি দেওয়া দলগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং খেলাফত মজলিস।
এর মধ্যে সোমবার তিনটি দল এবং রোববার একটি দল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সোমবার আলাদা আলাদা সংবাদ সম্মেলন করলেও একই দিন কর্মসূচি পালনের কথা জানিয়েছে চার দলই।
এর মধ্যে ৫ দফা দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও ৬ দফা দাবিতে খেলাফত মজলিস আন্দোলন অভিন্ন কর্মসূচি দেয়। এর আগে রোববার ৫ দফা দাবিতে একই কর্মসূচি ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ-সমাবেশ, ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের সকল মহানগর তথা বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ-সমাবেশ এবং ২৬ সেপ্টেম্বর জেলা/উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ।
এই ৪ দলসহ বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি (একাংশ), জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ ও আমার বাংলাদেশ বা এবি পার্টি এই যুগপৎ আন্দোলনে থাকার খরব এসেছিল গণমাধ্যমে।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি ছাড়া ৩টি দল সময়ের আলোকে জানায়, তারা কোনো যুগপৎ আন্দোলনে নেই। আপাতত তারা ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যকে শানিত করার ওপর জোর দিচ্ছেন। রোববারে সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত ইসলামীও জানিয়েছে, এখনও যুগপৎ কোনও আন্দোলন বা কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেয়নি দলটি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিআর, জুলাই সনদ কার্যকরসহ বিভিন্ন দাবিতে ৮টি দল যুগপৎ আন্দোলনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও ৩ দিল তা থেকে সরে আসে। যে চারটি দল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সেগুলো অভিন্ন। তারা একই দিন কর্মসূচি পালন করবে। এখন যুগপৎ আন্দোলনের কথা না বললেও ঘোষিত কর্মসূচি এবং দাবি দেখেই বোঝা যায় সমঝোতার মাধ্যমেই এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। মূলত সরকারকে চাপে রেখে দাবি আদায় করতেই এই কৌশল নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদ ঘোষণা ও এর ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন চায় দলগুলো।
৫ দাবিতে জামায়াতের কর্মসূচি
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আল-ফালাহ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচির ঘোষণা দেন দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ-মিছিল, ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল এবং ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের সব জেলা বা উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল।
তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি প্রস্তাবের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হন। দীর্ঘ আলোচনার পর ৮৪টি প্রস্তাব সিদ্ধান্ত আকারে গৃহীত হয়। অনেকটি প্রস্তাবের সঙ্গে দু–একটি রাজনৈতিক দল ভিন্নমত পোষণ করায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।
জামায়াত বরাবরই জুলাই সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে জানিয়ে ডা. তাহের বলেন, আমরা মনে করি, জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি প্রদান ব্যতীত ছাত্র–জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অভ্যুত্থান ও তার অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।
ডা. তাহের বলেন, জনগণের দাবিগুলো কার্যকর করার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। এমন অবস্থায় জনগণের দাবি আদায়ের জন্য গণ-আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
পাঁচ দফা দাবিতে অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সোমবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচির ঘোষণা দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর)।
তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করা, বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ভারতীয় তাঁবেদার ও ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের বিচার ও বিচারকালে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
কর্মসূচিগুলো হচ্ছে- ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল, ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ এবং ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল। চরমোনাই পীর বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিক আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
দেশের ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ হওয়ার কাছাকাছি মন্তব্য করে মুফতি রেজাউল করীম বলেন, ইসলামি দলগুলোর ব্যাপারে ৫ আগস্টের পরে বলেছিলাম, আমরা ইসলামি দলগুলো একটি বাক্সে যাওয়ার ব্যাপারে একটা ঘোষণা দিয়েছি। আমরা চেষ্টা করছিলাম, এখন আলহামদুলিল্লাহ এটা অনেকটাই কাছাকাছি। এ রকম একটা পরিবেশ আল্লাহর রহমতে তৈরি হয়েছে।
যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি একই প্ল্যাটফর্মে হবে কি না, তা সময় হলে জানা যাবে উল্লেখ করে চরমোনাই পীর বলেন, এই আন্দোলনের মাধ্যমে তারা সরকারকে চাপে রাখতে চান।
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনদের নিয়ে এই আন্দোলন চলবে। তিনি বলেন তারা জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ও এর আইনি ভিত্তি চান। জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতেই তারা আগামী জাতীয় নির্বাচন চান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় নেতা গাজী আতাউর রহমান, মাওলানা ইউনুস আহমদ, মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, আশরাফ আলী আকন, আশরাফুল আলম, আহমদ আবদুল কাইয়ূম ও কেএম আতিকুর রহমান, মুফতি মোস্তফা কামাল, কেএম শরীয়াতুল্লাহ প্রমুখ।
৬ দফা দাবিতে খেলাফত মজলিসের কর্মসূচি
এদিকে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচনসহ দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ছয় দফা দাবি জানিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে খেলাফত মজলিস।
রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের লিখিত বক্তব্য দেন। খেলাফত মজলিসের দাবিসমূহ হচ্ছে- অবিলম্বে জুলাই জাতীয় সনদ ঘোষণা করা ও এর আইনি ভিত্তি দেওয়া,
জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর ভিত্তিতেই ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এর জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা, পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষের সদস্য নির্বাচন করা, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও তার দোসরদের অপরাধের বিচার দৃশ্যমান করা,
আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সব দোসরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত ও নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা, নির্বাচনে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা, অবৈধ অস্ত্র, পেশিশক্তি, কালোটাকার প্রভাবমুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া এবং দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গানের শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে বাতিল করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া।
এসব দাবি আদায়ে ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল, ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের সব মহানগরীতে বিক্ষোভ মিছিল এবং ২৬ সেপ্টেম্বর জেলা/উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে খেলাফত মজলিস।
আহমদ আবদুল কাদের বলেন, সরকার জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি প্রদানের সুস্পষ্ট উদ্যোগ না নিলে পরবর্তীতে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।। তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণ ও নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য ঘোষিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতির পক্ষে। সে জন্য তারা এ দাবি করছেন। তবে নতুন এই দাবি ও কর্মসূচি পূরণে সম্মিলিত কোনো কর্মসূচি হবে কি না বা অন্য কোনো দল যুক্ত হবে কি না, সে বিষয়ে খোলাসা করে কিছু বলেননি আহমদ আবদুল কাদের।
এর আগে রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক জুলাই সনদের কার্যকর বাস্তবায়নসহ পাঁচ দফা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
দলটির দাবি হচ্ছে, জুলাই সনদ অবিলম্বে বাস্তবায়ন, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, আগামী নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি, জুলাই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করা ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন।
Your Comment